অনলাইন নার্সারি থেকে গাছ কিনে যেভাবে
নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে সৌখিন সব ধরনের পন্য এখন অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়।বিশেষ করে গত দুই বছরে কোভিড-১৯ ও লকডাউনে অনলাইন ব্যবসাটা বেড়েছে। সেইসাথে বেড়েছে প্রতারকদের সংখ্যাও।আমি আজ কথা বলব কৃষি পন্য ও প্রতারক নার্সারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে। আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাচ গাছের চার খুঁজতেছিলাম।ফেসবুকে চারা গাছ বেচা-কেনার অসংখ্য গ্রুপ ও পেজ রয়েছে। কিন্তু কেউ আসল জাতে চারা অর্থাৎ Eleteria cardamom দিতে পারে নি।সকলে ফলস গাছ দিয়েছে সেটাকে বন্য এলাচও বলা হয়।একবারতো ১৫ দিন পর গাছ পেলাম,গাছটাকে আর বাঁচানো যায় নি।সৌদি খেজুরের চারা নিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে কিছু লোক।আমি অনলাইনে তাদের সাথে যোগাযোগ করি। বীজ থেকে গোঁজানো চারার দাম চেয়েছিলো ২০০০ টাকা আর গাছের গোঁড়া থেকে বের হওয়া চারার দম ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। পরবর্তীতে আমি নিজেই বীজ থেকে চারা তৈরি করেছি।
অনলাইনে আঙ্গুর চারার দাম চেয়েছিলো ৬০০ টাকা। অথচ সাভার হার্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রতি পিচ মাত্র ২৫ টাকা করে কিনেছিলাম। আপেল চারা দাম ১২০০ টাকা চেয়েছিলো।পরবর্তীতে স্থানীয় একটি নার্সারি থেকে ৬০০ টাকায় কিনেছিলাম। মাল্টা আর কমলার দাম চেয়েছিলো ৪০০-৫০০ টাকা।অথচ আমার এলাকার নার্সারি থেকে মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। সরকারি হার্টিকালচার সেন্টারে তো আরো কম দামে ভাল জাতের মাল্টার চারা পাওয়া যায়।
কেউ কেউ অগ্রীম টাকা নিয়ে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অনেকে ফেসবুকে ব্লক করে দেয়।অনকে সংখ্যায় কম দেয়। অনেকে ভিন্ন গাছ দেয়।তাই সাবধান এদের থেকে। তবে সবাই যে খারাপ,প্রতারক তা নয়,অনেক বিশস্ত ও প্রোফেশনাল লোক রয়েছে।
ইদানিং অনলাইন ও কিছু নার্সারি মালিক লাল কাঠাল,সাদা কাঠাল ও কিছু আজগুবি গাছকে বিদেশি গাছ বলে প্রচারণা চালিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা শুরু করেছে। অথচ তারা নিজেরা কখনো এগুলো বাস্তবে ফলতে দেখেনি।তাদের কাছে প্রমাণ চাইলে দিতে পারে না।অনলাইন থেকে ছবি নিয়ে তা দিয়ে সবাই প্রচারণা চালায়।তারা এতোবেশি প্রচারণা চালায় যে মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।প্রচুর অর্থ ব্যায় করে বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করে অথচ কাংখিত সফলতা পাওয়া যায় না। আসলে সব ফল-ফসল যেমন সবদেশে হয় না তেমন একটি দেশের সব এলাকায় একই ফসল হয় না। আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পার্থক্যের কারণে। বিদেশি কিছু ফল-ফসল আমাদের দেশেও হচ্ছে কিন্তু তার সাকসেস রেট দেখতে হবে তো।উপযুক্ত পরিবেশে একটি গাছ থেকে ১০০ কেজি আপেল পাওয়া গেলে আপনার এলাকায় আপনি পাচ্ছেন ৫ কেজি।তো শখের বসে দু-চারটা লাগাতে পারেন এসকল বিদেশি গাছ।পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে যদি প্রথমেই বানিজ্যিক চাষাবাদ করতে যান তবে সর্বস্বান্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে।
তাই সকল কৃষক ও গাছপ্রেমীদের বলব,আপনারা কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিন,সরকারী হার্টিকালচার সেন্টার থেকে চারা কিনুন।যদি বিদেশি নতুন প্রজাতির গাছ লাগাতেই হয় তবে পরীক্ষামূলকভাবে দু-একটা লাগাতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন